বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন একটি দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কারিগরি শিক্ষা একটি অপরিহার্য মাধ্যম। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কারিগরি শিক্ষা শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বাস্তবধর্মী ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে কারিগরি শিক্ষার বড় অবদান রয়েছে। জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া সহ বহু দেশ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তাদের জনগণকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবে এবং নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগ
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি) বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরির দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিটিইবির অধীনে পরিচালিত শিক্ষাক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং
- ডিপ্লোমা-ইন-জুট টেকনোলজি
- ডিপ্লোমা-ইন-লেদার টেকনোলজি
- ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার
- ডিপ্লোমা-ইন-ফরেস্ট্রি টেকনোলজি
- ডিপ্লোমা-ইন-মেরিন টেকনোলজি
- ডিপ্লোমা-ইন-হেল্থ টেকনোলজি
- এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা)
- এইচএসসি (ভোকেশনাল)
- এসএসসি (ভোকেশনাল)
এছাড়াও বিটিইবি বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করছে, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।
কারিগরি শিক্ষার উপকারিতা
কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করেন না, বরং বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগও শিখে থাকেন। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট কোনো কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা এবং স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করা।
কিছু বিশেষ উপকারিতা হল:
- দ্রুত কর্মসংস্থান: কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা দ্রুত কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। অর্জিত দক্ষতার ভিত্তিতে তারা নিজেদের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ খুঁজে নিতে পারে।
- নিজস্ব উদ্যোগে শিল্প প্রতিষ্ঠা: কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ: কারিগরি শিক্ষা বিদেশেও স্বীকৃত এবং সম্মানিত। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
নারী ও কারিগরি শিক্ষা
নারীদের জন্যও কারিগরি শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহিলা অধিদপ্তর নারীদের কারিগরি শিক্ষার্জনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, পৃথিবীর যে দেশে যত বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে, সেই দেশ তত বেশি উন্নত। নারীদের কারিগরি শিক্ষায় অগ্রসর করে তোলার মাধ্যমে দেশ আরো দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।
সরকারের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে, যা এই শিক্ষার গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
উপসংহার
কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং স্বনির্ভর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ শিক্ষা শুধু দেশের জন্য নয়, ব্যক্তিগত উন্নতির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কর্মক্ষম ও দক্ষ করে তুলতে পারবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে আসুন।